Reader Response
রকমারি নীল ফড়িং বুক রিভিউ প্রতিযোগিতা
#রকমারি_নীল_ফড়িং_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা
বইয়ের নাম: নীল ফড়িং
লেখক: আব্দুল্লাহ শুভ্র
প্রকাশনী: কবি
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
পৃষ্ঠা সংখ্যা:২১৬
মুদ্রিত মূল্য:৩৭৫৳
কাহিনি সংক্ষেপ:
উপন্যাসে দেখা যায় পুবাইলের ঝলমলিয়া গ্রামের নাফিলা আর সাবের নামের দুইজন দুইজনকে ভালোবাসে। কিন্তু তাদের এই ভালোবাসায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় কিছু মানুষ। সেইসব মানুষের চক্রান্তে নাফিলা আর সাবেরের মাঝে দুরত্ব সৃষ্টি হয়। দুরত্ব এতটাই বেড়ে যায় যে সাবের বাড়ি জমায় বিদেশে। কিন্তু নাফিলা সাবের দুইজন দুইজনকে মনে মনে ভালোবেসে যায়। শেষ পর্যন্ত তারা কি এক হতে পারে নাকি অভিমানে দুইজন যায় দুই প্রান্তে তা জানতে হলে পড়লে হবে নীল ফড়িং উপন্যাস। তাছাড়া অতিপ্রাকৃত কিছু কাহিনী উপন্যাসকে করে তুলেছে রোমাঞ্চকর।
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
‘নীল ফড়িং’ গল্পটা একটা রোমাঞ্চকর গল্প ।আমাদের ব্যস্ততায় ঠাসা, ধুলোবালিময়, কণ্টকাকীর্ণ জীবনে এ ধরনের গল্পগুলো মন ভালো করার ঔষধ। গল্পটার সাথে চমৎকার কিছু সময় কাটালাম।অতিরিক্ত নাটকীয় কিছুই ছিলনা। সাবলীল ভাষায় বর্ণিত গল্পটি পড়তে পড়তে মন চনমনে হয়ে উঠছিল।হাওয়াই মিঠাই এর মত এক নিমেষেই সমাপ্তিতে এসে মনে হয়েছিল আরেকটু কাহিনী খোলাসা করলে মন্দ হতো না! গল্প হলেও আমাদের চারপাশের অনেক বাস্তবতাই আলোকপাত করা হয়েছে। চরিত্রদের জীবনের ঘটনাগুলো মূলত আমাদেরই কারো না কারো জীবনের গল্প। বন্ধুত্ব, মিথ্যাচার, কপটতা, সুখ দুঃখ এইসব ই তো জীবনের অংশ। কোনো অংশ বাদ দিয়ে জীবন কাটানো যায় না।
যেকোনো সম্পর্ককে দৃঢ় করতে চাইলে দুজনকে সমান এফোর্ট দিতে হয়। একজন হামাগুড়ি অন্যজন দৌড়ালে সে সম্পর্কে ভারসাম্য থাকে না।যার ফলে নড়বড়ে হয়ে গিয়ে সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হয়।কিন্তু দুজনের প্রতি বিশ্বাস দুজনকে আগলে রাখে। উপন্যাসে সাবের আর নাফিলা চরিত্রে অসীম ভালোবাসা দেখা যায়। বিচ্ছেদ, অপেক্ষা, ফিরে আসা সব মিলিয়ে দুর্দান্ত কিছু সময় কাটবে। অতিপ্রাকৃত জিনিস নিয়ে ব্যাখ্যা খুঁজে নাই কারণ কিছু জিনিসে ব্যাখ্যা খুঁজতে নেই।
চরিত্র বিশ্লেষণ:
সাবের: গল্পের নায়ক। সাবের চরিত্রে দেখা যায় প্রেমিক, ভালো ছেলে, ভালো বন্ধু হওয়ার গুণ। সাবের বোটানিক্যাল গার্ডেনে নাফিলাকে যেই ওয়াদা দেয় সেই ওয়াদা নিয়ে সারাজীবন চলার জন্য প্রস্তুত হয়। সাবের কিছু কিছু ক্ষেত্রে নাফিলার উপরে বিশ্বাস রাখলে এত দুঃখ পেত না।
নাফিলা: গল্পের নায়িকা। যাকে ঘিরেই রয়েছে ৩ জন পুরুষের মধ্যে কাহিনী ঘটতে থাকে। তবে নাফিলা ভাগ্যবান সে সাবেরকে পেয়েছে। নাফিলা অল্প বয়সের হলেও তার চরিত্রে আত্মবিশ্বাসী, আত্মসম্মান দেখা দেয়।
মাখন: এই উপন্যাসে সবচেয়ে জঘন্য চরিত্র। মাতাল, নারীলোভী সহ সব খারাপ বৈশিষ্ট্য এই চরিত্রে দেখা যায়।দুইজন মানুষ কে আলাদা করার জন্য যত প্রকার ছলচাতুরি দরকার সব মাখন করে। মাখন তার উদ্দেশ্যে সফল ও হয়। সাবেরের বাবার চিকিৎসার সময় পুলিশ দিয়ে সাবারকে অপদস্থ করার বিষয় টা বেশী কষ্টের।
বেলাল স্যার: উপন্যাসে আরেকটা অপছন্দের চরিত্র। যদিও গল্পের শেষে তার জন্য নাফিলা আর সাবের নতুন আশা ফিরে পায়। যদি উনি চিঠি নিয়ে কারসাজি না করত তবে নাফিলা এত দুর্ভোগ পেত না এই জন্য তার উপরে পাঠক মনে অনেক ঘৃণা কাজ করে।
এছাড়াও উপন্যাসে একলাছ সাহেব, জেবুন্নেছা, তাহেরুন্নেছা, মোনায়েম সাহেব, তোতা মিয়া, লক্ষী সহ নানা চরিত্রের দেখা পাওয়া যায়।
অতিপ্রাকৃত নিয়ে কিছু বলব না। তাহলে স্পয়লার হয়ে যাবে।
লেখনশৈলী:
একটিমাত্র বই পড়ে লেখকের লেখা বিচার করা ঠিক কিনা জানা নেই তবুও আমার মনে হয়ে লেখকের লেখা সত্যিই খুব সুন্দর। উনার লেখা পড়ার পর মুগ্ধ হয়ে আমিও বলছি আমি লেখকের বাকি বইগুলোও পড়তে চাই এবং সংগ্রহ ও করবো ইনশাআল্লাহ।
রেটিং – ৯/১০
#রকমারি_নীল_ফড়িং_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা
বইয়ের নাম: নীল ফড়িং
লেখক: আব্দুল্লাহ শুভ্র
প্রকাশনী: কবি
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
জনরা: অতিপ্রাকৃত ও ভৌতিক
পৃষ্ঠা সংখ্যা:২১৬
মুদ্রিত মূল্য:৩৭৫৳
ফ্ল্যাপ:
পৌষ মাস চলছে। বাইরে ভীষণ শীত। রাত বেশ গভীর। পুবাইলের অদূরে ঝলমলিয়া গ্রাম। মতি মিয়ার চায়ের দোকানে একলাছ সাহেব বসে আছেন। উনি অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। দোকানে অন্য কোনো ক্রেতা নেই। এ সময় লাল ফ্রক পরা রহস্যময় একটি ছোট্ট বালিকার আবির্ভাব ঘটে। সেই সঙ্গে কিছু নীল ফড়িং। লাল ফ্রক পরা রহস্যময় ছোট্ট বালিকাটি জানায় তার নাম নাফিলা। তার বাবার নাম একলাছ। একলাছ সাহেব ঘাবড়ে যান। হারিকেনের আলোয় ছোট্ট বালিকাটিকে দেখতে থাকেন। মতি মিয়া, একলাছ সাহেবকে সতর্ক করে দেন, এ মেয়েটি অলৌকিক, রহস্যময় কোনো কিছু। এর আগেও এই মেয়েটি অন্য কোনো এক ভদ্রলোকের সঙ্গে এই দোকানে, এমনই রাতের আঁধারে কথা বলেছিল। ঐ ভদ্রলোককেও লাল ফ্রক পরা এ রহস্যময় বালিকাটি একইভাবে, ভদ্রলোকের নিজের কন্যার নামে, নিজের নাম বলেছিল! পরদিন ওই ভদ্রলোকের নিজের কন্যাটি পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়। একলাছ সাহেব ভয় পেয়ে যান। অজানা আতঙ্কে ভোগেন। উনার একমাত্র মেয়ের নাম নাফিলা। এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। নাফিলাকে উনি প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। এলাকার মেধাবী ছেলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাবেরের সঙ্গে নাফিলার প্রেমের সম্পর্ক চলছে। মাখন, নাফিলার সঙ্গে সাবেরের এই সম্পর্ককে মেনে নিতে পারছে না। মাখন নিজেও নাফিলাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। নাফিলার ওপর ক্ষোভ ও অভিমান নিয়ে সাবের বিদেশ পাড়ি জমায়। গৃহশিক্ষক বেলাল মাস্টারও নাফিলাকে ভালোবাসতে শুরু করে। নাফিলা এখন কী করবে? গল্পটি নাটকীয়ভাবে এগুতে থাকে। সাবের ও নাফিলার ভাগ্যে কী আছে? নাফিলা কি বেঁচে থাকবে? শেষ মুহূর্তে আবারও একটি নীল ফড়িং ও ছোট্ট সেই রহস্যময় বালিকার আবির্ভাব ঘটে। এখন কী হবে? সবকিছুর ব্যাখ্যা হয় না- ব্যাখ্যা খুঁজতে নেই!
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
গল্পের মধ্যে একটা অতিপ্রাকৃত ব্যাপার যা লেখক ধোঁয়াশা রেখেছে। তাই উপন্যাস পড়ার পর মনে হবে শেষ হইয়াও হইল না শেষ। এই উপন্যাসে নানা চরিত্রের আবির্ভাব ঘটে। তবে নায়ক সাবেরকে আমার একটু দুর্বল লেগেছে। যে নাফিলা মেয়ে হয়ে সাবেরের বাড়ি যায় সাবেরের সাথে ঝামেলা মেটানোর জন্য সেখানে সাবেরের উচিত ছিল একবার যেকোনো ভাবে নাফিলার সাথে দেখা করা। নাফিলার মধ্যে সাবেরের চলে যাওয়ায় যেই ডিপ্রেশন দেখা দেয় তাতে নাফিলা যে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়নি এজন্য নাফিলাকে আমার শক্ত মনের নারী মনে হয়েছে।
উপন্যাসে মাখন,বেলাল, তোতা মিয়া নামের অনেক ব্যক্তি আমাদের চারপাশে আছে। যাদের মন মানসিকতা এবং কাজ খুবই জঘন্য ধরনের। মাখন যে বড়লোকের বখাটে ছেলে। যে নাফিলাকে পাওয়ার জন্য সব থেকে নোংরা কাজ করে। বিয়ে একটা পবিত্র জিনিস। কিন্তু নাফিলার সাথে বিয়ের সময় কবুল বলা না সত্ত্বেও মাখন আর তার বাবা যেই কাহিনী করে তা পাঠক মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
নাফিলাকে কিছু কিছু জায়গায় আবেগী, কিছু কিছু জায়গায় শক্ত লেগেছে। তবে নাফিলার সাবেরের প্রতি ভালোবাসা ছিল নিখাত। সাবের চরিত্রে এমন কিছু সমস্যা দেখা যায় যা মানবজীবনে যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে। আর এই সব সমস্যা আমাদের কাছের মানুষই করে থাকে এইটাও দেখা যায় উপন্যাসে।
কিছু কিছু বিষয় বস্তু ছিলো হৃদয়স্পর্শী। তাই এই বই পড়ে পাঠক একটা সুন্দর সময় কাটাবে নিঃসন্দেহে বলা যায়।





